আকীদাহ্ মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোনো ইবাদত আল্লাহ
তাআলার নিকট গ্রহণযোগ্য হওয়ার পূর্বশর্ত হলো, বিশুদ্ধ আকীদা। মহান আল্লাহ
দুনিয়ায় পাঠানোর পূর্বেই রূহের জগতে আমাদের থেকে তাওহীদে বিশ্বাস তথা
বিশুদ্ধ আকীদাহ’র প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, “আর
যখন তোমার রব বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং
নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলেছিলো,
অবশ্যই! আমরা সাক্ষী রইলাম। আবার না কিয়ামত দিবসে বলতে শুরু কর যে, এ
বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না অথবা বলতে শুরু কর যে, র্শিক তো আমাদের
বাপ-দাদারা উদ্ভাবন করেছিলো আমাদের পূর্বেই, আর আমরা হলাম তাদের
পশ্চাদ্বর্তী সন্তান সন্ততি। তাহলে কি সে কর্মের জন্য আমাদেরকে ধ্বংস
করবেন, যা আমাদের বাতিলপন্থীরা করেছে?” (সূরা ৭; আ‘রাফ ১৭২)
সর্বশেষ নাযিলকৃত কুরআন মাজীদসহ সকল আসমানী কিতাবের মূল বক্তব্য ও
নবী-রাসূলগণের দাওয়াতের লক্ষ্যই হলো, মানবজাতির মাঝে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা এবং
তাগুতের মূলোৎপাটন। মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি সকল জাতির মাঝে রাসূল
পাঠিয়েছি এ দাওয়াত দেওয়ার জন্য যে, তোমরা আল্লাহর ‘ইবাদত করো এবং তাগুতকে
বর্জন করো।” (সূরা ১৬; নাহল ৩৬)
তাওহীদের নির্ভেজাল বিশ্বাস এবং সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে নেক আমলের
মাধ্যমেই মানবজাতির জন্য নিশ্চিত হতে পারে দুনিয়ার সুখ-শান্তি এবং পরকালে
জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামাত। কিন্তু বনী আদমের
চিরশত্রু“ শয়তান আমাদের এই চূড়ান্ত সাফল্য কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। তাই
তাওহীদের বিপরীতে তাগুতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তার সর্বান্তকরণ
প্রচেষ্টা। কুরআনের ভাষায় তার ঘোষণা, “আপনি (আল্লাহ) যেহেতু আমাকে সঠিক পথ
হতে বিচ্যুত করেছেন সেহেতু আমিও (তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য) আপনার সরল
পথে অবশ্যই ওৎ পেতে বসে থাকবো। অতঃপর তাদের কাছে আসবো তাদের সম্মুখ,
পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।” (সূরা
৭; আ‘রাফ ১৬-১৭)
এ জন্যই শয়তান তার কূটকৌশল বাস্তবায়নের জন্য বেছে নিয়েছে, ‘র্শিক’-এর
মতো গোমরাহীর মহাসড়ক। কারণ, র্শিকই চুরমার করে দিতে পারে বনী আদমের
স্বপ্নসাধকে। ধ্বংস করে দিতে পারে, ‘আমল’-এর গগনচুম্বী প্রাসাদ। ভেজালে
পূর্ণ করে দিতে পারে তার খাঁটি ঈমানকে। র্শিক-এর করালগ্রাসে আবদ্ধ করার
জন্য সে ফাঁদ পেতেছে, কখনো নেকলোকদের মৃত্যুর পর তাদের মূর্তি বানিয়ে, কখনো
আশা পূরণের স্থল হিসেবে মাজারকে দাঁড় করিয়ে, কখনো মৃতব্যক্তিকে অতিশয়
ক্ষমতাধর সাজিয়ে আবার কখনো ওলীদের প্রশংসার অতিরঞ্জন করে জান্নাতের
ফায়সালাকারী রূপ দিয়ে। মানুষকে ইবাদাতের নামে নানারকম বানোয়াট বিষয় ও
পদ্ধতির মাধ্যমেও গোমরাহের দিকে ডাকছে ইবলিস-শয়তান। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“বলো, আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকদের সংবাদ দেবো, যারা কর্মের দিক থেকে খুবই
ক্ষতিগ্রস্ত? তারা সেসব লোক, যাদের পার্থিব জীবনের প্রচেষ্টা পথভ্রষ্টতায়
পর্যবসিত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করছে।” (সূরা ১৮; কাহফ
১০৩-১০৪)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, “আর শয়তান তাদের আমলকে সুশোভিত করে পেশ করেছে।” (সূরা ২৭; নামল ২৪)
যুগে যুগে সকল নবী-রাসূল এবং তাঁদের উত্তরাধিকারী নেক আলেমগণ তাগুতকে
হটিয়ে আল্লাহর জমীনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে সদা সক্রিয় রয়েছেন।
কিন্তু মানুষ পারিবারিক কারণে, শয়তানের প্ররোচনা, প্রবৃত্তির তাড়নায়,
পরিবেশের বদ-ছোঁয়ায় বারংবারই তাওহীদের বিশ্বাস ভুলে গিয়ে র্শিক এবং
কুফরীতে লিপ্ত হয়ে যায়।
তাওহীদ ও র্শিক-এর সংঘাত চলছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। নির্ভেজাল তাওহীদী
আকীদাহ’র পতাকাবাহীদের উপর নেমে আসছে যুলুম-নির্যাতনের বিভিষীকা। কিন্তু
কোনোকালেই থেমে থাকেনি তাওহীদের আওয়াজ বুলন্দকারীদের মেহনত। আর তাই
র্শিক-বিদআতের ভিত্তিমূলেও ক্রমাগত আঘাত হানছেন দীনের দাঈ’ মহান আল্লাহর
নেক বান্দাগণ ।
আকীদাহ-বিশ্বাসের নানারকম বিভ্রান্তি ও র্শিক-বিদআতের বেড়াজালে নিমজ্জিত
মুসলিম উম্মাহর এই ক্রান্তিলগ্নে এ বইটি কিছুটা হলেও তাদের আকীদাহ্
বিশুদ্ধকরণে সহযোগিতা করবে বলে আমার বিশ্বাস। এতে যতটুকু সঠিক লিখতে
পেরেছি, তা আল্লাহর অপার করুণা আর ভুল-ভ্রান্তির সবটাই আমার অপারগতা ও
অযোগ্যতা। সম্মানিত পাঠকদের নিকট আরজ, ভুল-ত্রুটি দৃষ্টিগোচর হলে মেহেরবানী
করে জানাবেন, যেনো পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করে নিতে পারি।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিশুদ্ধ খাঁটি ঈমান নিয়ে দুনিয়ায় শান্তিতে বেঁচে
থাকার এবং বিশুদ্ধ আকীদাহ্ নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করে চিরস্থায়ী
জান্নাত লাভ করার তাওফীক দিন। আমীন! ইয়া রাব্বাল আলামীন