তাকওয়া
শব্দের আভিধানিক অর্থ, বেঁচে থাকা, দূরে থাকা, পরহেজ করা, নিজেকে বাঁচানো
ইত্যাদি। পরিভাষায় এটি আল্লাহকে ভয় করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ আল্লাহর
শাস্তি ও তাঁর আজাবের ভয়ে গুনাহ ও অবাধ্যতা থেকে মুক্ত থাকার নামই হল
তাকওয়া। জাহান্নামের আজাবের ভয়ে গুনাহে লিপ্ত হওয়া থেকে বেঁচে থাকা।
ইমাম রাগেব ইসফাহানি বলেন, ‘তাকওয়া বলা হয় নফসকে সেসব জিনিস থেকে বাঁচানো
যেগুলোর ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা হয়। তাকওয়ার এই অর্থই সঠিক ও যথার্থ।
মুত্তাকি মানে হলো পরহেজগার ব্যক্তি; যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন। তাকওয়ার বিভিন্ন স্তর রয়েছে। যথা:
১। সাধারণ তাকওয়া। যেমন, কুফর থেকে বেঁচে থাকা।
২। বিশেষ তাকওয়া। যেমন, সন্দেহ-সংশয়মূলক জিনিস বা বিষয় থেকে হারাম হয়ে যাওয়ার ভয়ে বেঁচে থাকা।
৩। সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাকওয়া। যেমন, মুবাহ এবং সন্দেহমূলক জিনিস থেকে বেঁচে থাকা।
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলদের আদেশ তাকওয়া অবলম্বন করো—
মহান আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে তাকওয়া
অবলম্বন করার আদেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন— ‘তোমাদেরকে এবং
তোমাদের পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তাদেরকে আদেশ করেছি যে, তোমরা
আল্লাহকে ভয় করো।’ (সুরা নিসা: ১৩১)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘সুতরাং সে জাহান্নামের আগুন থেকে
রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা
হয়েছে কাফেরদের জন্য।’ (সূরা বাকারা: ২৪)
অন্য জায়গায় আরো বলেন, ‘আর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারো সামান্য উপকারে আসবে না।’ (সূরা বাকারা: ৪৮)
এক হাদীসে এসেছে, হযরত আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিনিসের
বদৌলতে বেশিরভাগ লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বলেনঃ তাক্বওয়া ও
সচ্চরিত্রের বদৌলতে। তাকে আরও জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিনিসের কারণে
অধিকাংশ লোক জাহান্নামে যাবে? তিনি বলেনঃ দু’টি অংগ- মুখ ও লজ্জাস্থান।
[৩৫৭৮]
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২৪৬ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)
তাকওয়ার স্থান হল হৃদয়। নীরবে নিভৃতে, একাকী সর্বদা
অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকার নামই হল তাকওয়া। প্রতিটি আমলের ক্ষেত্রে বান্দার
নিয়ত খালেস হওয়া শর্ত। যদি বান্দার নিয়ত থাকে প্রসিদ্ধি অর্জন এবং লোক
দেখানো তাহলে তাকওয়া সামান্যও অর্জিত হবে না। তাকওয়া অবলম্বন করা ব্যতীত
প্রকৃত মুমিন হওয়া অসম্ভব। জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে হলে এবং জান্নাতে
প্রবেশ করতে হলে আবশ্যিকভাবে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ তাআলা
বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তা জানেন যা তোমাদের
অন্তরে রয়েছে।’
(সূরা মায়িদা: ৭)
তাকওয়া তথা খোদাভীতির ফায়দা ও উপকারিতা এবং আবশ্যকীয়তা সহ
মুত্তাকিদের ঘটনা এবং তাদের উত্তম পরিসমাপ্তির ব্যাপারে জানতে হলে পড়ুন
‘তাকওয়া: মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন’ ।